বেসিস সফটএক্সপোতে জেবিটা ও বেসিস জাপান ডেস্কের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর
বাংলাদেশ সরকারের পর দেশের প্রথম কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসিস জাপান ডেস্কের সাথে একটি সমঝোতা চুক্তি সই করেছে জাপান বাংলাদেশ আইটি অ্যাসোসিয়েশন (জেবিটা)। চুক্তির আওতায় জেবিটা জাপানে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায় সম্প্রসারণ ও বেসিস জাপান ডেস্ক বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে জাপানের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রগুলো নিয়ে কাজ করবে।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিউশন সেন্টারে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার খাতের জাতীয় বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) আয়োজিত ১৭তম ‘বেসিস সফটএক্সপো ২০২৩’ আয়োজনে এ সমঝোতা স্মারক সই হয়। বেসিস জাপান ডেস্কের পক্ষ থেকে বেসিস পরিচালক ও বেসিস জাপান ডেস্কের সভাপতি একেএম আহমেদুল ইসলাম বাবু ও জেবিটার প্রতিনিধি এই সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
তার আগে ‘এ প্রসপেক্টটাস অ্যান্ড অপরচুনেটি উইদ জাপান’ শিরোনামে একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বেসিস পরিচালক ও বেসিস জাপান ডেস্কের সভাপতি একেএম আহমেদুল ইসলাম বাবু’র সঞ্চালনায় বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইউয়ামা কিমিনরি। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো: শামসুল আরেফিন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদ বিন মোমেন। সন্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাইকা বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তমুহিদে।
এছাড়া বৈঠকে আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোস্তফা কামাল, জেবিসিসিআই সভাপতি হিকারী কাওয়াই, জাপানে দোষিশা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগি অধ্যাপক বিষ্ণু কুমার অধিকারী, বেসিসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সামিরা জুবেরী হিমিকা ও কেকে ডেসটিনির পরিচালক ও সিওও রেজওয়ানুর কবির।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেট্রোর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ উজি আনডো। এছাড়াও জাপানের মার্কেটে বাংলাদেশী কোম্পানিরগুলোর সম্ভাবনা শীর্ষক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন জাপান- বাংলাদেশ আইটি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অঞ্জন দাস।
গোলটেবিল বৈঠকে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের কাজের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশে দক্ষ জনবল তৈরির বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন জাপানের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও দেশটির প্রতিনিধিদের জানানো হয়, বাংলাদেশে বিনিয়োগের নানা সুবিধার কথা। সেখানে রোবটিক্স, আইসিটি, আইটিইএসসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
পরে বাংলাদেশে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি বা জাইকার প্রধান ইচিগুচি তমুহিদে বলেন, ‘আমি আপনাদের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে এবং এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে আনন্দিত। আমরা জাপান সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাতে চাই বাংলাদেশের অন্যতম সব প্রকল্পে কাজ করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ, যমুনার ওপর বঙ্গবন্ধু রেলসেতু, গোমতী ও মেঘনায় সেতু, বিভিন্ন রোড, পদ্মায় রেল সংযোগসহ বিভিন্ন কাজ করছি।’
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ আইসিটি ক্ষেত্রে এখন খুবই এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আইসিটি ডিভিশনের সঙ্গে স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে অংশীদার হয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছেন, এখন সেটিকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করার কাজে জাইকা অনবদ্য ভূমিকা রাখবে।’
তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩০০ ইঞ্জিনিয়ার জাপানে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। তারা তাদের অর্জিত জ্ঞান বাংলাদেশে কাজে লাগাতে পারবে। এটা সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে জাইকা। এছাড়া বাংলাদেশেও আইসিটি ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষ করে তুলতে কাজ করছি।
তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব সামসুল আরেফিন বলেন, ‘বাংলাদেশের ডিজিটাল ডিভাইসের বাজার এখন প্রসারিত হয়েছে। দেশের ও বিভিন্ন দেশের ব্র্যান্ড পণ্য বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে। আমাদের স্টার্টআপ ও ফ্রিল্যান্সাররা এখন সারা দেশে ছড়িয়ে আছে। জাপান চাইলে দেশে ভালো একটি নেটওয়ার্ক অবকাঠামো তৈরি করে এই সুবিধা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে এরই মধ্যে জাপান আমাদের আইসিটির উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের কাজ করছে।
জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, জাইকা বাংলাদেশের সঙ্গে অসাধারণ সব কাজ করছে। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাতেই হয়। এখানে আমি একেবারেই নতুন, মাত্র দুই মাস হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে আমাকে সবাই আপন করে নিয়েছে। জাপানকে গুরুত্ব দিয়ে বেসিসের এমন আয়োজন করায় তাদের স্যালুট ও ধন্যবাদ।
‘আমরা নারায়ণগঞ্জ ভ্রমণ করেছি। সেখানকার মেয়র আইভি রহমান বলেছেন তারা জাপানের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জকে স্মার্টসিটি হিসেবে গড়ে তুলতে চান। আমরাও আগ্রহ প্রকাশ করেছি কাজ করার জন্য। গত মাসে জাপানের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ভ্রমণ করে বাংলাদেশের অত্যাধিক সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। আমরাও চাই ভবিষ্যতে কাজ করতে।’
চারদিনব্যাপী বেসিস সফটএক্সপো ২০২৩ চলবে আগামীকাল রবিবার পর্যন্ত। সব ধরনের দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকছে এই আয়োজন। দর্শনার্থীরা যাতে সহজেই বেসিস সফটএক্সপোতে যাতায়াত করতে পারেন সেজন্য বিশেষ শাটল বাস সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া রয়েছে গেমিং জোন, বিজনেস লাউঞ্জ, ফুড কোর্ট ও কনসার্ট।
এবারের বেসিস সফটএক্সপোর প্ল্যাটিনাম স্পন্সর হিসেবে রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড। গোল্ড স্পন্সর হিসেবে রয়েছে হুয়াওয়ে। সিলভার স্পন্সর হিসেবে রয়েছে রবি, পাঠাও এবং ফাইবার অ্যাট হোম। এছাড়া ফাইভজি পার্টনার হিসেবে রয়েছে গ্রামীণফোন।
আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (আইবিপিসি) এর সহযোগিতায় আয়োজিত এবারের বেসিস সফটএক্সপোর পেমেন্ট পার্টনার হিসেবে বিকাশ, ইন্টারনেট পার্টনার হিসেবে আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড এবং অ্যাসোসিয়েট পার্টনার হিসেবে রয়েছে দারাজ, বিডিজবস ডটকম ও ই-কুরিয়ার।এবারের
বেসিস সফটএক্সপো প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। আগ্রহীরা বেসিস সফটএক্সপোর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট (https://softexpo.com.bd/) থেকে বিনামূল্যে নিবন্ধন করে প্রদর্শনীতে অংশ নিতে পারবেন।