সারাবিশ্বে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্র্যান্ডিংয়ে সহায়তা করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
বিদেশে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসায় সম্প্রসারণ ও সক্ষমতা তুলে ধরতে কান্ট্রি ব্র্যান্ডিংয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শুধু কথাই নয়, কাজে প্রমাণ দিতে প্রতি দুইমাসে অন্তত একবার বেসিসের সাথে নীতিনির্ধারণী বৈঠক করা হবে। শনিবার বেসিস সফটএক্সপোর অ্যাম্বেসেডর নাইটে এমন প্রতিশ্রুতির কথা জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, বেসিসের এই আয়োজন এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সর্ববৃহৎ। ২০০৮ সালের পর থেকে প্রযুক্তিতে অনেক উন্নয়ন ঘটেছে দেশে। বেশকিছু ভিশন রয়েছে বাংলাদেশের, ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন এবং আপনারা বলছেন ২০৩১ সালের মধ্যে এই খাত থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার আয় করা যাবে। আমি আশা করি বেসিস এই সম্ভাবনা বাস্তবায়ন করতে পারবে। বেসিস যদি চায় তার দুই হাজার সদস্যের সাথে বসে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের নীতিনির্ধারণ করতে পারি। এক্ষেত্রে সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী অথবা সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা আমাদের পক্ষ থেকে উপস্থিত থাকবেন।
তিনি জানান, আমরা ধীরে ধীরে হলেও আগাচ্ছি। আমরা সবসময় বেসিসের সঙ্গে আছি, আপনারা এগিয়ে যান। সামনে ব্রাজিলসহ ল্যাতিন আমেরিকার বেশকিছু দেশে আমরা আইসিটিসহ বিভিন্ন খাতের বিষয় নিয়ে কথা বলবো।
বেসিস সফটএক্সপোর অন্যতম সেরা আয়োজন ছিল শনিবার। অ্যাম্বেসেডর নাইটে অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতরা বাংলাদেশের আইসিটি খাতের উন্নয়নে মানবসম্পন উন্নয়ন, একাডেমিক জ্ঞান বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণের মতো বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, এসব পদক্ষেপ নিলে খুব স্বল্প সময়ে বিশ্বের অনেক দেশের কাছে আইসিটি ডেসটিনেশন তথা প্রযুক্তির পাওয়ার হাউজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ।
বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ সফটএক্সপো আয়োজনের কারণ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিতে বিভিন্ন দেশে এখন লাখ লাখ দক্ষ লোকের চাহিদা রয়েছে, কিন্তু সে অনুযায়ী জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও অনেক চাহিদা রয়েছে। কেননা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে দেখার কথা ঘোষণা করেছেন। সেটির জন্যও আমাদের দক্ষ জনবল দরকার।
আমাদের এখন এগোতে হবে ‘থ্রি বাই থ্রি পলিসিতে’। এখানে তিনটি স্টেকহোল্ডারকে হাতে হাত রেখে কাজ করতে হবে। সরকার, ইন্ডাস্ট্রি এবং একাডেমি। এখানে তিনটি কাজ একসঙ্গে করতে হবে, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, আমরা ৫ নাকি ২০ বিলিয়ন আয় করতে চাই সেটার গবেষণা, সেটা দেশে এবং দেশের বাইরেও। দ্বিতীয়ত, রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশ এবং দেশের বাইরেও আমাদের দরকার ইন্ডাস্ট্রি প্রোমোশন। বাংলাদেশ এখনও আইসিটি ডেসস্টিনেশনের জায়গা হিসেবে প্রচার পায়নি। ফলে সেটা করতে হবে। তৃতীয়ত, চাহিদা পূরণে দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে।
বেসিস সভাপতি আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রয়োজন অনুযায়ী আইটি শিল্পের প্রচারণা কম হয়। জাপানের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করতে বেসিস জাপান ডেস্ক চালু করেছে। এখানে উপস্থিত প্রতিনিধিরা যদি চান আমরা তাদের দেশের ডেস্কও চালু করতে পারি। আমরা চাই বিশ্বের প্রতিটি দেশের কাছেই আমাদের পরিকল্পনা ও উদ্যোগ পৌঁছে যাক। এসময় তিনি বেসিস সফটএক্সপো আয়োজনের অংশীদারকে ধন্যবাদ জানান।
শুরুতে বিদেশের বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সক্ষমতা তুলে ধরেন বেসিসের সদস্য প্রতিষ্ঠান ব্রেইন স্টেশন ২৩ এর প্রতিষ্ঠাতা রাইসুল কবির, ইন্টেলিজেন্ট মেশিনসের প্রতিষ্ঠাতা অলি আহাদ, সেলিসের প্রতিষ্ঠাতা তপু নেওয়াজ ও অরবিটেক্স বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান শাহরিয়ার মাসুদ।
এরপর শুরু হয় প্যানেল আলোচনা। আলোচনা সঞ্চালনা করেন ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম।
আলোচনায় মাহফুজ আনাম প্রথমেই অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুর কাছে জানতে চান কীভাবে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে আইসিটি ও ডিজিটাল বিষয়গুলো নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারে।
জবাবে জেরেমি ব্রুর বলেন, বাংলাদেশ এখন অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি দেশ বিশেষ করে আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিতে। সেটি শুধু অষ্ট্রেলিয়ার জন্য নয়, বরং বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের জন্যও।
এ সময় তিনি দুই দেশের বাণিজ্যের কিছু বিষয় তুলে ধরেন। বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যে পণ্য রপ্তানি হয়েছে সেখানে আইটি এবং আইটি সম্পর্কিত পণ্য বাড়ছে। এটি খুবই ইতিবাচক। এমনকি দুই দেশের মধ্যে মেধার বিনিময় করতে বাংলাদেশে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ট্রেলিয়া নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বলেও জানান।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি অবশ্য বাণিজ্য বিনিময়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে বাংলাদেশিদের ব্রেইন গ্যাপ দেখতে পান। সে জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নও সহায়তা করতে পারে বলে জানান তিনি।
ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি ইস্ট্রুপ পিটারসেন ডিজিটাল বাংলাদেশের বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এমন এক্সপো খুবই ভালো উদ্যোগ। তরুণদের উচিত প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন করা। ডেনমার্ক ছোট দেশ হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক খুব শক্ত। প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের যে সম্ভাবনা রয়েছে তা আমাদের দৃষ্টিকে আকর্ষণ করেছে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ হবে প্রযুক্তির পাওয়ার হাউস।
রাষ্ট্রদূতরা বেসিসের এই আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা এবারের বেসিস সফটএক্সপোকে ‘মাইলস্টোন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।