News Details : BASIS SoftExpo 2023

image

সফটএক্সপোতে রেসকিউ রোবট, উদ্ধার করবে ভূমিকম্পে আটকা পড়া শিশু

‘ভূমিকম্প, রানা প্লাজার মতো ভবন ধস, কোথাও বিল্ডিংয়ে গ্যাস লিক হয়ে আগুন ধরলে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রেসকিউ রোবার ও রেসকিউ ড্রোনটি দ্রুত মানুষকে সাহায্য করতে পারবে। এই রেসকিউ ড্রোনটি ওই ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাটাতে দ্রুত ফ্লাই করে যাবে। ওখানে বিপদগ্রস্ত মানুষগুলো কি অবস্থায় আছে সেটির একটা থ্রিডি ম্যাপ করে সেটা পাঠাবে রেসকিউ রোবারকে। তখন রোবার ওখানে গিয়ে ৫০ কেজির কম কোন শিশু আটকা পড়ে থাকলে সাথে সাথে রেসকিউ করে আনতে পারবে।’

এভাবেই রেসকিউ রোবার ও রেসকিউ ড্রোনের বিষয়ে বলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের স্টুডেন্ট ও সিনিয়র কনিট্রিবিউটর এবি সিদ্দিক তৌহিদ। ‘ওয়েলকাম টু স্মার্টভার্স’ স্লোগান নিয়ে বেসিসের আয়োজনে রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘বেসিস সফটএক্সপো-২০২৩’এর স্টলে সাজিয়ে রেখেছেন রেসকিউ রোবার ও রেসকিউ ড্রোনের প্রজেক্ট দুটি।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সাহায্যে রেসকিউ শুধু উন্নত বিশ্বে সম্ভব, তা কেন হবে! তা হতে হবে আমাদের দেশেও এই ভাবনা থেকে দ্বিচারির তরুণ উদ্ভাবকেরা কাজ শুরু করেন এক অভাবনীয় উদ্ভাবনের লক্ষ্যে। সে উদ্ভাবনই হলো এই রেসকিউ রোবার ও রেসকিউ ড্রোন।

রেসকিউ রোবার ও রেসকিউ ড্রোনটি তৈরি করেছেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির একদল আত্মপ্রত্যয়ী তরুণ উদ্ভাবক। ব্র্যাকউ দ্বিচারি প্রজেক্টের অধীনে তারা এই রোবট ও ড্রোন তৈরি করেছেন। সিনিয়র ও জুনিয়র কন্ট্রিবিউটর সব মিলে আটজন স্টুডেন্ট এই প্রজেক্ট দুটি তৈরি করেছেন। ব্র্যাক ইউ ডিচারি প্রজেক্টে কাজ করেছেন মোট ২০ জন স্টুডেন্ট।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির রোবটিক্স ডিপার্টমেন্টের লেকচারার আব্দুলাহ হেল কাফি এই প্রজেক্টের মূল উদ্যোক্তা বলে জানিয়েছেন এই উদ্ভাবক। এই প্রজেক্ট দুটির কাজ করতে সময় লেগেছে তাদের প্রায় পাঁচ মাসের মতো।

প্রজেক্টের কম্পোন্যান্টগুলি কিছু দেশের আর বাকিগুলি বাইরে থেকে আনা হয়েছে। রেসকিউ ড্রোনটি তৈরি শুরু থেকে বাজারে আনা পর্যন্ত খরচ হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। রেসকিউ রোবারটির খরচ চার লাখ টাকা হয়েছে বলে জানান ওই উদ্ভাবক।

রোবারটির বিশেষত্বের বিষয়ে উদ্ভাবক এ বি সিদ্দিক তৌহিদ বলেন, ধরেন কোন শিল্প নগরীর কোথাও গ্যাস লিক হয়েছে। সেখানে গিয়ে রেসকিউ ড্রোনটি ডিটেক্ট করে ম্যাপিং করতে সক্ষম। আবার যেখানে মানুষ বৈদ্যুতিক সুইচ অফ বা অন করতে পারছে না সেখানে রোবট গিয়ে সেগুলি করতে পারবে।

তিনি বলেন, যেকোন ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যেখানে মানুষ অল্প সময়ের মধ্যে যেতে পারছে না, সেখানে এই রোবটটি দ্রুত পৌঁছাতে পারবে। সেসাথে যেকোন জিনিস পৌঁছে দিতেও সক্ষম। এটি ৫০ কেজি ওজনের জিনিস এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে। সেসাথে বিপদগ্রস্ত জায়গায় ৫৫ মিনিটের মধ্যে ফ্লাই এবং পরিদর্শন করে তথ্য নিয়ে আসতে পারে। থ্রিডি ম্যাপিং করতে পারে। যেখানে কোন মানুষ যেতে পারছে না, সেখানে ইন্টারনেট কানেক্টশনের মাধ্যমে আমাদের এই রোবার ড্রোনটি যেতে পারবে। সেসাথে তথ্য নিয়ে এসে দিতে পারবে।

দেশের তৈরি এই প্রজেক্ট দুটি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে সুনাম কুড়িয়েছে বিদেশেও। গত বছরে পোল্যান্ডে ইউরোপিয়ান রোবটিক্স লীগের রোবটিক্স কম্পিটিশনে এই দুটি প্রজেক্ট নিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন এই তরুণ উদ্ভাবকরা। রোবটিক্স কম্পিটিশনে অংশ নিয়ে সমস্ত বিশ্বে চতুর্থ এবং সমস্ত এশিয়ার মধ্যে প্রথম হয়েছে এই প্রজেক্ট দুটি বলে জানালেন তিনি।

তিনি জানান, এই রোবটের পরবর্তী আপডেট ভার্সন তৈরি করা হচ্ছে। যেটি হবে আরও বেশি শক্তিশালী। ওই রোবট কোন দুর্ঘটনার সময় ভূমিকম্প বা অগ্নিকাণ্ডের সময় ক্ষতিগ্রস্ত বা বিপদগ্রস্ত মানুষদের সরাসরি দ্রুত রেসকিউ করে আনতে পারবে। এটা ১১০ কেজি ওজনের জিনিস দ্রুত বহন করতে সক্ষম। সম্পূর্ণ অটোমেটেড সিস্টেমে পরিচালিত হবে। আমরা চাইলে রিমোটের সাহায্যেও চালাতে পারবো।

এ ধরনের প্রজেক্ট বাস্তবায়নে বড় বাধা হলো ফান্ড। স্টুডেন্ট হিসেবে পর্যাপ্ত ফান্ডিংয়ের অভাবে প্রজেক্ট দুটি আরও বড় পরিসরে নিয়ে যেতে পারছেন না তারা। এটাকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাজারে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।


সরকারিভাবে যেসব ফান্ড দেয়া হয় সেগুলি পেলে তারা এটাকে নিয়ে আরও বেশি করে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট করতে পারবেন বলে জানান তিনি। সেসাথে আরও ভাল ভাল কম্পোন্যান্ট কিনতে পারবেন। তার মতে, এভাবে আমাদের রোবটিক রিসার্চকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে দেশে একটা প্রভাব ফেলতে চাই। তাই, সামর্থ্যবানদের এ প্রজেক্টে ফান্ডিংয়ে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান তিনি।