স্মার্ট বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এর ডেটা সিকিউরিটি
স্মার্ট বাংলাদেশের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ হলো এর ডেটা সিকিউরিটি। আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের যেসব ডেটা রয়েছে সেগুলি সিকিউর করা অমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। স্মার্ট বাংলাদেশের তিনটা সেক্টরের মধ্যে একটা সমন্বয় করা দরকার। সেগুলি হলো আইটি ইন্ডাস্ট্রি, একাডেমিয়া ও ইউনিভার্সিটি এবং সরকার। এটা করা গেলে আমাদের দেশে স্মার্ট সিটিজেন গড়ে উঠবে। আর স্মার্ট সিটিজেন স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর উদ্যোগে ‘স্মার্ট টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট ফর স্মার্ট বাংলাদেশে’ শীর্ষক একটি গোল টৈবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
রবিবার (২৬ ফ্রেব্রুয়ারি) পূর্বাচলে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের সেমিনার হলে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী বেসিস সফটএক্সপো এর অংশ এই গোল টৈবিল বৈঠক আয়োজন করা হয়।
বক্তারা বলেন, স্মার্ট টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট হলো স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে একটা দীর্ঘমেয়াদী ডেভেলপমেন্ট পরিকল্পনা যা যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটা দেশের সামগ্রিক দিক তথা সকল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সোসাইটি, সরকারসহ সব কিছু একটা স্মার্টলি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগিয়ে যাবে।
সিটিও ফোরাম বাংলাদেশের জেনারেল সেক্রেটারি আরফি এলাহীর সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন সিটিও ফোরাম বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট তপন কান্তি সরকার বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করতে আমাদের অনেকগুলি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। সব সেক্টরকে প্রোপার ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে স্মার্ট করা অনেক কঠিন একটা বিষয়। তবে আইটি ইন্ডাস্ট্রি যদি তাদের সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও সুদূরপ্রসারী চিন্তা দিয়ে সরকারকে সাহায্য করে তাহলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেল করা সহজ হবে।
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিটিও ফোরাম বাংলাদেশের জেনারেল সেক্রেটারি আরফি এলাহী। উপস্থাপনায় তিনি বলেন, সরকারের সব সেক্টর, আইন-আদালত, স্কুল-কলেজ, যোগাযোগ ব্যস্থা, চিকিৎসা ব্যবস্থাকে স্মার্ট করতে হবে। আমাদের স্মার্ট সিটিজেন দরকার। স্মার্ট সিটিজেন দেশের সব সেক্টরে পরিচালনায় এর প্রভাব পড়বে। জনগণকে স্মার্ট করতে পারলে দেশের সব কাজও স্মার্টলি করতে পারবে।
বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, আমার মনে হয়, এতদিন পর বাঙালি জাতি একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য পেল। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন। ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নত রুপ স্মার্ট বাংলাদেশ। এই স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য আমাদের আরও স্মার্ট হতে হবে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্মেন্ট, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট সোসাইটি এই চারটি স্তম্ভ-এর উপর ভর করে তৈরি হবে আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন এটুআই প্রোগ্রাম প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। তিনি বক্তব্যে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশে যাচ্ছি। মানে একটা স্টেজ থেকে আরেকটা সেটজে যাচ্ছি। স্মার্ট টেকনোলজির সাথে আমাদের নাগরিকদেরও সেভাবে তৈরি করতে হবে যাতে তারা এগুলি যথাযথভাবে ব্যবহার করে দেশকে স্মার্টলি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
স্মার্ট বাংলাদেশের সিটিজেনদের স্মার্ট ক্যাপসিটি ও স্কিল গ্যাভ নিয়ে কথা বলেন বেসিসের ডিরেক্টর মুশফিকুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের দেশের আইটি প্রফেশনালরা তৈরি হয় কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা মতো না। আমাদের চিন্তা হলো কী করে, কি টুলস ব্যবহার করে আমার বিজনেসকে ডেভেলপ করবো। এটা বুঝতে হবে। আমার বিজনেস প্রসেস যদি কেউ না বুঝে তাহলে কাজ করতে পারবে না। আধুনিক টেকনোলজি আগামীর বিজনেস প্রসেসকে চেঞ্জ করবে। সে অনুসারে আমাদের আগামীর আইটি প্রফেশনালদের তৈরি করতে হবে।
আলোচক হিসেবে বাংলাদেশ আর্মি ইনফরমেশন টেকনোলজির ডিরেক্টর ড. সেলিম আহমদ খান বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশে গঠনে এমন একটা কিছু করতে হবে যাতে পুরো বিশ্ব সেটার উপর রির্ভর করবে।আমাদের দেশে ও বিদেশে যে ম্যানপাওয়ার আছে তাদের আইসিটি ও টেকনোলজি কোর্সের মাধ্যমে এমন ভাবে ট্রেইনআপ করবো যাতে নিজে স্মার্ট সিটিজেন হতে পারে এবং পরে তার ফ্যামিলি মেম্বারকেও স্মার্ট হিসেবে গঠন করতে পারবে।
বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ব্যারিস্টার হারুন অর রশীদ বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশে হলো সেলফ মনিটরিং ও অ্যানালাইসিস টেকনোলজি। সেটা একটা মেশিন বা সফটওয়্যার যেটিই বলি না কেন, যেটি নিজে নিজে কন্ট্রোলিং ও মনিটরিং করবে। নিজে মনিটরিং করে ডেটা অ্যানালাইসিস করে রিপোটিং করবে। একটা মানুষের মতো বিহেব করবে। আমরা মেশিন লার্নিং প্রযুক্তিতে যুক্ত হতে যাচ্ছি। তখন আমাদের প্রোডাক্ট উৎপাদন বেড়ে যাবে। অল্প মানুষে বেশি প্রোডাক্ট উৎপাদন হবে। আমাদের দেশে যেসব তথ্য রয়েছে সেগুলিকে সিকিউর করতে আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। দেশের তৈরি যেসব সল্যুশন রয়েছে সেগুলিকে উন্নত প্রযুক্তি তৈরি করে দেশের ডেটা সিকিউর করতে হবে।
ভূমি মন্ত্রণালয় সচিব মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের দেশের সব সেক্টরকে স্মার্ট করে গড়ে তুলতে আমাদের স্মার্ট সিটিজেন তৈরি করতে হবে। স্মার্ট সিটিজেনরাই স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে। এর জন্য জাতীয় নীতিমালা করতে হবে।
বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, আমাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের স্মার্ট ব্যস্থাপনায় যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলি আমাদের সদস্য কোম্পানিগুলিকে আইডেনন্টিফাই করতে বলবো। পরে সেসকল সমস্যার সল্যুশন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বেসিস ট্রেডবডির মাধ্যমে জানাবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে বেসিস ২০০৮ সাল থেকে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে আসছে। এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনেও একই ভাবে ভূমিকা পালন করবে।
গোল টৈবিল বৈঠক আরও বক্তা দেন বেসিস পরিচালক আহমেদুল ইসলাম বাবু, থ্রিভিং স্কিলস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, পিএমআই বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অন্বেষা আহমেদ, পিএমআই বাংলাদেশের ডিরেক্টর আহমেদ সিদ্দিক জাফর ভূঁইয়া, টেকএন টেলেন্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসিফ, প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও ডিক্যাস্টালিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিলা ইনুনসহ খাত সংশ্লিষ্ট নেতারা।
এবারের বেসিস সফটএক্সপোর প্ল্যাটিনাম স্পন্সর হিসেবে রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড। গোল্ড স্পন্সর হিসেবে রয়েছে হুয়াওয়ে। সিলভার স্পন্সর হিসেবে রয়েছে রবি, পাঠাও এবং ফাইবার অ্যাট হোম। এছাড়া ফাইভজি পার্টনার হিসেবে রয়েছে গ্রামীণফোন।
আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (আইবিপিসি) এর সহযোগিতায় আয়োজিত এবারের বেসিস সফটএক্সপোর পেমেন্ট পার্টনার হিসেবে বিকাশ, ইন্টারনেট পার্টনার হিসেবে আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড এবং অ্যাসোসিয়েট পার্টনার হিসেবে রয়েছে দারাজ, বিডিজবস ডটকম ও ই-কুরিয়ার।
আজ রবিবার সন্ধ্যায় পর্দা নামছে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সর্ববৃহ প্রদর্শনী বেসিস সফটএক্সপো ২০২৩ এর।